রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন

আড়াই টাকা ‘অনিয়ম’ হারানো চাকরি ফিরে পেলেন ৩৯ বছর পর

আড়াই টাকা ‘অনিয়ম’ হারানো চাকরি ফিরে পেলেন ৩৯ বছর পর

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারি পাটবিজ মাত্র আড়াই টাকা বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ। আর সেই অপরাধে জেল-জরিমানা দিয়ে মো. ওবায়দুল আলম আকনকে চাকরিচ্যুত করে এরশাদ সরকারের সামরিক আদালত। ওই সময় তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ে পাট সম্প্রসারণ সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ ৩৯ বছর পর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে চাকরি ফিরে ফেলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সেই সঙ্গে তাকে অতীতের সব বেতন-ভাতা পরিশোধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ে পাট সম্প্রসারণ সহকারীর দায়িত্বে ছিলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে পাঁচ প্যাকেট পাটের বীজ বাবদ আড়াই টাকা (প্রতি প্যাকেটে ৫০ পয়সা) বেশি নেওয়ার অভিযোগ তোলেন এক ক্রেতা। এই অভিযোগে ১৯৮২ সালের ১৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় ওবায়দুল আলমকে। এর পর সামরিক আদালতে বিচার শেষে ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দুই মাসের কারাদ- এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নিয়মানুযায়ী তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তও করা হয়। এর পর তিনি কারাভোগ শেষে মুক্তি পান।

এ অবস্থায় চাকরি ফিরে পেতে ওবায়দুল আলম ২০১১ সালে আবেদন করেন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাকরি ফিরিয়ে না দেওয়ায় তিনি চাকরিচ্যুতির আদেশের বিরুদ্ধে ও সামরিক আদালতের সাজা বাতিল চেয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর এক রায়ে সাজা বাতিল করে তাকে সব সুযোগসুবিধা দেওয়াসহ চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আপিল বিভাগে আপিল করে। এর শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। সে রায়েও ওবায়দুল আলম আকনের বেতন-ভাতাসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ঘোষণাসংক্রান্ত অংশটি (এক্সপাঞ্জ) বাদ দেওয়া হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে আবেদন খারিজ করে গতকাল রায় দিলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম আকন তার চাকরিজীবনের সব বেতন-ভাতা ফিরে পাবেন। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ওবায়দুল আলম আকন বলেন, ‘জীবিত থাকাবস্থায় এ রায় আমি দেখে যেতে পারব, তা ভাবতেই পারিনি। তবে আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877